জলবায়ু-পরিবর্তনের অন্যতম নেতিবাচক প্রভাব হলো বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি। আর এই বাড়ন্ত তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক-উষ্ণতা দু’ভাবে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথমত: যেহেতু বাড়ন্ত তাপমাত্রার কারণে বিশ্বের সাগর ও মহাসাগরগুলো উষ্ণ হয়ে পরছে, তাই এই পানি প্রসারিত হয়ে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত: বাড়ন্ত তাপমাত্রার কারণে বিশ্বের বরফে-ঢাকা অঞ্চলগুলোর বরফ গলিত হয়ে সাগর ও মহাসাগরগুলোতে ছড়িয়ে পরছে এবং সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারত উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ডুবে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
বাংলাদেশের একটি বন্যাপ্রবন দেশ। এমনিতেই শত শত বছর ধরে দেশটি বন্যার কারণে ভুগছে। তার সাথে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হলো সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা। বন্যাপ্রবন বাংলাদেশের ৬ থেকে ৮ শতাংশ সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সনের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তাছাড়া, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমূহের নদীসহ অন্যান্য খাবার পানির (মিঠাপানির) উৎসগুলোতে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে শুকনো-মৌসুমে সমুদ্র থেকে লবণাক্ত (নোনা) পানি ঢুঁকে পরছে। এতে করে ধীরে ধীরে খাবার পানীয়’র অভাব দেখা দিবে। ভারত, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডকেও একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভারতের বেশ বড়সড় ক্ষতি হতে পারে। আরব-সাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভারত-মহাসাগরের সাথে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল থাকাতে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দেশটিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
একটি হিসেব মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বড় অংশ (যেখানে প্রায় ৫.৫ কোটি মানুষের বসতি রয়েছে) সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে। যদি এই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বাড়ে, তাহলেও প্রায় ২ কোটি উপকূলীয় অধিবাসীর বসবাসস্থল সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মতো বঙ্গোপসাগরীয় আরও দু’টি দেশ থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারও একইভাবে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক কয়েক দশকের মধ্যেই পুরোপুরি সমুদ্রপৃষ্ঠে তলিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শহরটি প্রতিবছর ১০ সেন্টিমিটার করে ডুবে যাচ্ছে। মিয়ানমারেরও উপকূলীয় অঞ্চলের বড় একটি অংশ ২০৫০ সনের মধ্যে তলিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এইভাবে যদি জলবায়ু-পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের অবস্থার অবনতি হতে থাকে, তাহলে উপরোক্ত দেশগুলোসহ আরও অনেক দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কোটি কোটি বসবাসকারীরা একসময় জলবায়ু-শরণার্থীতে/উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।