বাংলাদেশের একটি গার্মেন্ট কারখানা।
[ বাহাউদ্দিন ফয়যী ]
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প অস্বীকার্যভাবে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। গত তিন দশকে এই শিল্পের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। তবে, যখন আমরা চীনের গার্মেন্ট শিল্পের সাথে তুলনা করি, তখন স্পষ্ট হয় যে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ রয়েছে।
চীন আজ গার্মেন্ট শিল্পে বিশ্ব নেতা। তারা প্রযুক্তি, উৎপাদন দক্ষতা এবং বাজার গবেষণায় অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। চীনে গার্মেন্ট উৎপাদনের প্রক্রিয়া এতটাই আধুনিক যে, তারা মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বিশাল পরিমাণে অর্ডার পূরণ করতে সক্ষম। তারা উচ্চমানের উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে যা তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়তা করে। এর ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প, যদিও দ্রুত বিকাশের পথে, কিন্তু প্রযুক্তির দিক থেকে এখনও পিছিয়ে আছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আমরা যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, তা প্রায়শই পুরনো। ফলে, আমাদের উৎপাদনের সময় এবং খরচ বেড়ে যায়, যা আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে হ্রাস করে।
এছাড়া, শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়েও বাংলাদেশের গার্মেন্ট কলকারখানা সমূহকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। চীনে শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের অধিকারের অবস্থান এখনও অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি শিল্প মালিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
আমাদের গার্মেন্ট শিল্পকে শক্তিশালী করতে হলে, উদ্ভাবন এবং গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে। চীন তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনে ফ্যাশন ডিজাইন এবং নতুন পণ্য উদ্ভাবনের জন্য ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে, যা তাদের বাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রাখে। বাংলাদেশের জন্যও এই পথ অনুসরণ করা জরুরি। নতুন পণ্যের উদ্ভাবন এবং ট্রেন্ড নির্ধারণে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত।
সরকারের এবং শিল্প মালিকদের যৌথ উদ্যোগে আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের মান বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গবেষণায় বিনিয়োগ আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দৃঢ় করবে।
বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। যদি আমরা চীনের উন্নতির দিকে নজর রেখে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারি, তবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে আরও সুনাম অর্জন করবে। আমাদের উচিত একসাথে কাজ করা, উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা এবং শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলা।
তদুপরি, বাংলাদেশের শিল্পের বৈচিত্র্য তৈরি করা উচিত। চীন একাধিক শিল্পে বিনিয়োগ করছে এবং তা তাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের জন্যও বিভিন্ন শিল্পে প্রসারিত হওয়া জরুরি, যাতে আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের উপর নির্ভরতা কমে এবং আমরা একটি টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি।